বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী যত মিষ্টি !

মিষ্টির ঐতিহ্য বাংলাদেশে বহুকালের৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের সমাহার৷ ছবিঘরে দেখুন তার কিছু নমুনা৷

default

পোড়াবাড়ির চমচম

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমকে বলা হয় মিষ্টির রাজা৷ যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরীর তীরের গ্রাম পোড়াবাড়িতে প্রথম এই মিষ্টি তৈরি শুরু হয়৷ এখানকার নদীর পানি নাকি সেই মিষ্টির স্বাদে আলাদা একটা বিশেষত্ব যোগ করত৷ প্রায় দেড়শ বছর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার জনৈক রাজা রাম গোরার হাতে জন্ম হয় সুস্বাদু এই চমচমের৷

default

নাটোরের কাঁচাগোল্লা

এটি নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন৷ ছানাকে চিনির ঘন সিরায় ডুবিয়ে বিশেষভাবে পাক দেয়ার পর ছেঁকে নেয়া এক ধরনের মিষ্টি হলো নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা৷

default

নওগাঁর প্যারা সন্দেশ

নওগাঁর প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন প্যারা সন্দেশ৷ জনশ্রুতি আছে, বহুকাল আগে নওগাঁ শহরের কালিতলার মহেন্দ্রী দাস নামে এক ব্যক্তি প্রথমে প্যারা সন্দেশ তৈরি শুরু করেন৷ প্যারা সন্দেশ তৈরির সময় তরল দুধের সাথে চিনি মিশিয়ে তা ভালোভাবে জ্বাল করে ক্ষীর তৈরি করা হয়৷ ক্ষীর যখন জড়িয়ে আসতে শুরু করে তখন গরম ক্ষীর দু’হাতের তালুর মাঝে সামান্য চাপ দিতে হয়৷ এভাবেই তৈরি হয় প্যারা সন্দেশ৷

default

কুমিল্লার রসমালাই

কুমিল্লার রসমালাইয়ের যাত্রা মাতৃভাণ্ডার এর হাত ধরে৷ আদিতে এর নাম ছিল ক্ষীরভোগ৷ পাকিস্তান আমলে অবাঙালিরা এসে এ ক্ষীরভোগকে রসমালাই বলতে শুরু করে৷ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বেশ কিছু মাতৃভাণ্ডার থাকলেও আসল প্রাচীন মাতৃভাণ্ডারটি কুমিল্লা শহরের মনোহরপুরে৷

default

জামতলার রসগোল্লা

যশোরের শার্শা উপজেলার জামতলার রসগোল্লার সুনাম দেশজোড়া৷ প্রায় ৫০ বছর আগে জামগাছের নীচে একটি চায়ের দোকানে জনৈক সাদেক আলী এই মিষ্টির জনক৷ জনশ্রুতি আছে, তাঁর কাছে কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় নেয়া এক আগন্তুক তাঁকে এই মিষ্টি তৈরির পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন৷ তবে বর্তমানে জামতলা বাজারে এখন প্রায় পনেরজন ব্যবসায়ী সাদেক আলীর উদ্ভাবিত সেই রসগোল্লা তৈরি করেন৷

default

নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি

নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি আকারে বালিশের মত বড় নয়, কিন্তু আকৃতিগত দিক থেকে অনেকটাই বালিশ সদৃশ৷ দুধ, ছানা, চিনি আর ময়দা মিশিয়ে তৈরি হয় মিষ্টি৷ নেত্রকোনা শহরের গয়ানাথের দোকানে পাওয়া যায় প্রসিদ্ধ এ মিষ্টি৷ দেখতে অনেকটা চমচমের মতো৷ প্রতিটির ওজন ২০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে৷

default

মুক্তাগাছার মণ্ডা

ময়মসিংহের মুক্তাগাছার মিষ্টি মণ্ডার সুনাম দেশজোড়া৷ মুক্তাগাছার তারাটি গ্রামের গোপাল পাল নামে এক ময়রা ১৮২৪ সালে বিশেষ এ মিষ্টান্ন তৈরি শুরু করেন৷ তাঁর পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরে এখনো তৈরি করেন এ মণ্ডা৷

default

বরিশালের আদি রসগোল্লা

বরিশালের রসগোল্লার স্বাদই আলাদা৷ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের রসগোল্লা থেকে এটি স্বতন্ত্র৷ এ মিষ্টির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে মিষ্টির পরিমাণ খুবই কম৷ দেশি গরুর দুধ, উন্নতমানের চিনি আর কাঠের চুলা এ মিষ্টি তৈরির মূল উপাদান৷ বরিশাল অঞ্চলের সর্বত্রই এ মিষ্টি পাওয়া যায়৷

default

নাটোরের ছানার জিলাপি

নাটোরের ছানার জিলাপিও বিখ্যাত৷ তবে এ মিষ্টির উত্পত্তি ভারতের নদিয়ার মুড়াগাছা অঞ্চলে৷ ছানার জিলাপি আসলে জিলাপির মতো নয়৷ ছানা দিয়ে তৈরি রসে ভেজানো এক ধরনের মিষ্টান্ন৷

default

গুটিয়ার সন্দেশ

বরিশালের গুটিয়া বাজারের সন্দেশের সুনাম দেশজুড়ে৷ গরুর দুধের ছানা দিয়ে তৈরি এ মিষ্টান্ন খুবই মজাদার৷

default

আরও যত বিখ্যাত মিষ্টি

বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন রয়েছে৷ যেমন ফরিদপুরের মালাই সর, দিনাজপুরের গুড় ক্ষীরমোহন, রংপুরের হাবসি হালুয়া, রাজশাহীর রসকদম, পাবনার ইলিশপেটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী, খেপুপাড়ার জগার মিষ্টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদি চমচম, মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টি ও রসকদম, পাবনার বটফল, ফরিদপুরের বাগাট রাজকুমারের সাগরভোগ, বরিশালের রসের সন্দেশ, বগুড়ার আদি মহররমের দই, বরিশালের গৌরনদীর দই ইত্যাদি৷

default

বাংলার মিষ্টি

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সব মিষ্টি এক ছাদের নীচে নিয়ে এসেছে ঢাকার ৬০ গুলশান অ্যাভিনিউতে অবস্থিত দোকান ‘বাংলার মিষ্টি’৷ এখান থেকে ঐতিহ্যবাহী সব মিষ্টি কেনা ছাড়াও দোকানে বসেই খেতে পারবেন যে কেউ৷

Leave a comment